আখিরাত অবিশ্বাসীদের অন্তর সত্যবিমুখ
আখিরাত : ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য- ‘আখিরাত’ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ মৃত্যু পরবর্তী জীবন। আখিরাত বলতে মৃত্যুর পর থেকে অনন্তকাল জীবনকে বুঝায়। কবর, হাশর, হিসাব, পুলসিরাত এবং জান্নাত-জাহান্নাম সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে আখিরাতের জীবনকে দু’টি পর্যায়ে বিন্যাস করা হয়েছে, ১. মৃত্যু থেকে কিয়ামত পযর্ন্ত। ২. কিয়ামত থেকে অনন্তকাল অবধি। সেখানে কোনো মৃত্যু নেই। নেই কোনো ধ্বংস বা লয় বা শেষ। (সিরাতুন নবী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৩)
প্রথম পর্যায়ের নাম হলো ‘আলমে বরযখ’ বা কবরের জীবন। মৃত্যুর পর মানব দেহ কবরস্থ করা হোক কিংবা সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হোক অথবা আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেওয়া হোক বা অন্য কোনোভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হোক- সব অবস্থাই তার জন্য আলমে বরযখে অর্ন্তভূক্তি। আর দ্বিতীয় পর্যায় হল, কিয়ামত, হাশর-নশর তথা অনন্তকালের জীবন।
কিয়ামত বলতে এমন এক সময়কে বোঝায় যখন আল্লাহর নির্দেশে জগতের সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপর যখন আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছা হবে তখন তিনি আবার সকলকে জীবিত করবেন। সকলেই পুনরুথিত হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। এরপর সকলের কাছ থেকে জাগতিক জীবনের সব কিছু হিসাব গ্রহণ করা হবে। হিসাব-নিকাশের মানদণ্ডে আল্লাহর যে সব বান্দা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারবে না তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ পর্যায় থেকে মানুষ অনন্তকালের জন্য জান্নাতে বা জাহান্নামে অবস্থান করতে থাকবে।
আখিরাতের উপর ঈমান আনার আবশ্যকতা : আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের মৌলিক আকিদাসমূহের মধ্যে অন্যতম। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ছাড়া ঈমান বিশুদ্ধ বা পরিপূর্ণ হয় না। এই মর্মে পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, আর যারা পরকালের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারা, ২ : ৪)
পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, আখিরাত, ফিরিশতাগণ, সমস্ত আসমানি কিতাব এবং নবীগণের উপর ঈমান আনলে। (সূরা বাকারা, ২ : ১৭৭)
আর যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারা ভ্রান্ত। এই সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কেউ ফিরিশতাগণে এবং তাঁর কিতাবসমূহে, তাঁর রাসূলগণে এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। (সূরা নিসা, ৪ : ১৩৬)
ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও আদর্শের উপর নিজেকে সুদৃঢ় রাখার জন্য আখিরাতের উপর আস্থাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন শুরু হবে এবং সে জীবনে পুরস্কার কিংবা শাস্তি বা সফলতা কিংবা ব্যর্থতা ইহকালের কর্মকাণ্ডের উপরই নির্ভরশীল- এ কথার বিশ্বাসই মানুষকে পার্থিব জীবনে সত্যপথের অনুসারী বানায় এবং ভালো আমলের পথে উদ্বুদ্ধ করে। আখিরাতের বিশ্বাস মানুষের মনে সত্যের প্রতি আনুগত্য এবং অসত্য পরিহার করার মনোভাবের জন্ম দেয়। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, এক ইলাহ, তিনিই তোমাদের ইলাহ, সুতরাং যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকারী। (সূরা নাহল, ১৬ : ২২)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈমানের পরিচয় দিতে গিয়ে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত আছে, হজরত জিবরাঈল (আ.) রাসূলুল্লাহকে (সা.) বললেন, আমাকে বলুন, ঈমান কাকে বলে? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করা। আর বিশ্বাস করা তাকদিরের ভালমন্দের উপর- এটাই ইমান। (বুখারী ও মুসলিম, সূত্র : মিশকাত শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১)