২০৫০ সালে ইউরোপে মুসলিম জনসংখ্যা হবে ২০ শতাংশ
আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যার হার ২০শতাংশ ছড়িয়ে যাবে। সম্প্রতি এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ইউরোপে মুসলিম জনসংখ্যার হার মোট জনসংখ্যার চার শতাংশের মতো।
তবে অভিবাসী এবং ইউরোপীয় মুসলিমদের উচ্চ জন্মহার মিলিয়ে যেটা দাঁড়াচ্ছে সেটা হলো ইউরোপের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের চেয়ে মুসলিমদের বৃদ্ধির হার গণিতিকভাবে বাড়ছে।
এতে করে আশা করা যায়, ৪০ বছর পর ইউরোপের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ হবে মুসলিম। সুতরাং এটা কীভাবে সম্ভব যে, মুসলমানরা ইউরোপের চেহারা বদলে ফেলবে? এ প্রশ্নও উঠেছে। অথচ এ ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে যে, ক্রমবর্ধমান মুসলিম ভবিষ্যতে ইউরোপের স্থিতিশীলতার জন্য অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ।
সম্প্রতি বৃটেনে কয়েকটি সংবাদ-মাধ্যম মুসলিম জনসংখ্যাবৃদ্ধিকে ‘মুসলিম জন্যসংখ্যা বোমা’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। অথচ ইউরোপের মুসলমানরা ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করেন না এবং তারা ইসলামের ধর্মীয় দিকটাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন।
মুসলিমরা বহুধা বিভক্ত জাতি। এ ধর্মের অনুসারীদের মূল বিশ্বাস এক ও অভিন্ন হলেও তাদের মধ্যে অনেকগুলো মতবাদ বিদ্যমান। বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যার হার ২৩ শতাংশের কিছু বেশি।
সম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৫০ সালে ইউরোপের মুসলিম সংখ্যার হার হবে এটার কাছাকাছি। তবে বাস্তবতার সঙ্গে এ চিন্তার কোনো মিল নেই বলে জানিয়েছেন মুসলমান চিন্তাবিদরা।
বিশ্বের মুসলিমরা যেমন বহুধা বিভক্ত ঠিক তেমনিভাবে ইউরোপের মুসলিম জনসংখ্যাও বহু মত পথের অনুসারী। তারা তাদের মূল বিশ্বাসের চেয়েও নিজস্ব দেশে ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি সংগঠিত হতে চান। যদিও মুসলমনারা শুক্রবার একত্রেই জুমারা নামাজ পড়েন। তবে এর মধ্যেও দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ দলাদলির কারণে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
ইউরোপীয় মুসলমানদের তাদের নতুন আবাসভুমিতে একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। তাদের মুল প্রশ্ন হলো ২০৫০ সালের মধ্যে তারা তাদের অবস্থান কি পরিমাণে সুসংহত করতে পারবে? তারা কি ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন? তাদের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম চাইবে না অভিবাসীর সন্তান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে। এসব প্রজন্মের সন্তানদের কি দেখা যাবে তাদের শত বছর আগের পূর্বপুরুষদের মত স্বদেশে ফিরে যেতে? আর কত দিন গেলে তারা তাদের বৈষম্য ভুলে যাবেন?
তুর্কি বংশোদ্ভুত কথাটি ভুলে গিয়ে সাধারণ জার্মান নাগরিকে পরিণত হবে? হতে পারে সেটা ২০৫০ সাল। সেটা হবে ঠিক আইরিশ আমেরিকান অথবা ইতালিয়ান আমেরিকানদের মতো। একথা কেউ চিন্তা করে না যে, তাদের ভূমিকা আমেরিকানদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তবে ধর্মক্ষেত্র ভিন্ন একটি বিষয়।
যদি একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাদের তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক হিসেবে দেখতে নাও চায় তথাপি তাদের পরিচয় হবে জার্মান মুসলিম হিসেবে। সেক্ষেত্রে তাদের জাতিগত পরিচয় হবে জার্মান এবং ধর্মীয় পরিচয় হবে মুসলিম। ইউরোপে অভিবাসীর সংখ্যা সংক্রান্ত যে কোনো সংবাদের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে উদ্বেগ ও ভীতিকর। অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে গণিতিক হারে। আর মুসলিম অভিবাসীরা হলো আতঙ্কের বিষয়। এমন ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে অনেকগুলো বৃটিশ পত্রিকায়। মুসলিম সঙখ্যা বৃদ্ধিকে তারা মুসলিম জনসংখ্যা বোমা হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তারা লিখেছেন,এভাবে মুসলিম সংখ্যা বাড়তে থাকলে একদিন ইউরোপ শাষিত হবে মুসলমানদের দ্বারা। আর এই ভীতির কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে হিজাব বা বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্পেনে তাৎক্ষনিকভাবে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্পেনীয়দের শতকরা ৬৫জন স্পেনে ইসলামের ক্রমবর্ধমান বিকাশে কম বেশি অথবা মারাত্মক উদ্বিগ্ন।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপ জুড়ে বাস করেন প্রায় ১০ লক্ষ মুসলিম নারী। এর মধ্যে বোরকা পরিধান করেন মাত্র কয়েক হাজার। এর মধ্যে ফ্রান্স,স্পেন এবং বেলজিয়াম পর্দার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
এখানে একটি বিষয় গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে,সেটা হলো ২০৫০ সালে যদি ইউরোপের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ মুসলিম হয় তথাপিও তারা সংখ্যালঘু হিসেবেই থাকবেন।
আর ইউরোপের মুসলমানরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর চেয়ে উদার ও খোলামেলাভাবে ইসলামী অনুশাসনগুলো মেনে চলার চেষ্টা করেন।